Featured

Story

জোনাকি পোকার আলোর উৎপত্তি

, জুলাই ০৩, ২০১৯ WAT
Last Updated 2021-03-25T05:32:16Z

জোনাকির আলো দেখে সবার প্রশ্ন জাগে কিভাবে এই আলোর উৎপত্তি হয়। এখানো জোনাকির আলোর পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণ গুলো দেওয়া হয়েছে। 


একদিন সন্ধ্যেবেলা ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। অন্ধকার করে এসেছে। রাস্তার দুপাশে টিম টিম করে জ্বলছে শ’য়ে শ’য়ে জোনাকি।জোনাকির আলো দেখে মনে হচ্ছে যেন আকাশের তারারা সবাই মাটিতে নেমে এসেছে। বড় স্নিগ্ধ মায়াময় তাদের আলো। মনে হচ্ছে আমি চলেছি এক স্বপ্নলোকের দিকে। আর ওরা যেন আমায় পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে। এত জোনাকি বহুদিন দেখিনি। অন্ধকারের মধ্যে যেন ওরা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। হাঁটু মুড়ে বসলাম জোনাকিদের পাশে। অন্ধকারের ঘন চাদর যেন আরও ঢেকে গেল চারদিকে। ওদের মধ্যে কেউ কেউ আমার মাথায়, হাতে বসতে শুরু করলো, সম্পূর্ণ উদাসীন আমার অস্তিত্বে।
আমিঃ-
“জোনাকি, কোথা থেকে পেলে এমন মায়াভরা আলো?” ওদেরই যেন জিগ্যেস করলাম।
জোনাকিঃ-
“আমাদের মধ্যে কিছু রাসায়নিক বস্তু আছে, যা থেকে এমন আলো বেরোয়, তোমার ভালো লেগেছে?”
আমিঃ-
চমকে উঠলাম। জোনাকি আমার সাথে কথা বলছে নাকি? বিশ্বাস হলো না। আশেপাশে তাকালাম, কেউ তো নেই। কে কথা বলল তাহলে?
জোনাকিঃ-
“এদিক ওদিক দেখছ কেন? আমরাই তো কথা বলছি তোমার সাথে”, হাতের ওপরে বসা জোনাকি কথা বলে উঠলো। আমিঃ-স্বপ্ন দেখছি নিশ্চয়। ভাবলাম যতক্ষণ এই স্বপ্ন চলে ততক্ষণই ভালো।
“তাহলে তোমরাই আমায় বলো কি রাসায়নিক পদার্থ আছে তোমাদের মধ্যে?” গল্প জুড়ে দিলাম ওদের সাথে।

জোনাকিঃ- “ লুসিফেরিন (firefly luciferin) বলে একরকম যৌগপদার্থ আছে যা লুসিফারেজ (luciferase) বলে এক উৎসেচকের সাহায্যে এটিপি (ATP = adenosine triphosphate) এবং অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ডাইঅক্সিটেন (dioxetane) গোত্রের যৌগ তৈরি করে। তারপর স্বতঃস্ফূর্তভাবে কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি করে আর তার সঙ্গে তৈরি করে অক্সিলুসিফেরিন (oxyluciferin)। এই অক্সিলুসিফেরিন উত্তেজিত অবস্থায় সবজে-নীল আলো বিকিরণ করে তারপর শান্ত হয়।
মূলকথাঃ- মূলত জোনাকির শরীরে লুসিফেরিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এদের শরীরে যখন বাতাস প্রবেশ করে, তখন বাতাসে থাকা অক্সিজেন এই লুসিফেরিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে আলো উৎপন্ন করে। এই যে প্রক্রিয়াটার মাধ্যমে জোনাকি পোকা আলো জ্বালায়, এটাকে বলা হয় বায়োলুমিনেসেন্স। আরও একটা মজার কথা হলো, আমরা জানি আলো সাধারণত তাপ উৎপন্ন করে। কিন্তু জোনাকির আলো থেকে খুব সামান্য পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয়। সেজন্য জোনাকির আলোকে বলা হয় ‘ঠাণ্ডা আলো’।