![]() |
সেই শৈশবের লাইব্রেরি: এক অদ্ভুত আটকে যাওয়ার গল্প |
ক্লাস সেভেনে তখন। জেলা পরিষদ পাবলিক লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক আমি। একদিন দেরি করে পৌঁছালাম, বোধহয় সাড়ে চারটে। লাইব্রেরি বন্ধ হয় পাঁচটায়। ঢুকেই দায়িত্বরত লাইব্রেরিয়ান ভাইকে সালাম দিয়ে ভেতরে গিয়ে বসলাম। বাইরে মৃদু বৃষ্টি, আকাশে সূর্যের দেখা নেই।
সেকালে মোটা বইয়ের প্রতি আমার আলাদা টান ছিল—বিদ্যানদের হাতে তো কখনো পাতলা বই দেখিনি! তাই নিয়ে বসলাম মোঘল আমলের ইতিহাসের এক বিশাল বই। পড়তে শুরু করলাম। বেশ মজার ইতিহাস! ঘণ্টাখানেক পড়ার পর জানালা দিয়ে দেখি বৃষ্টি থেমে গেছে। ভাবলাম, এই সুযোগে বাসায় ফিরি।
লাইব্রেরির ভেতর থেকে সামনে এসে দেখি চারপাশ অন্ধকার। দরজায় তালা! জানালার পাশে বসে পড়ায় খেয়াল করিনি, এদিকে আলো নেই। বুঝলাম, লাইব্রেরিয়ান ভাই আমাকে ভেতরে আটকে তালা মেরে চলে গেছেন। পকেট থেকে বাটন ফোন বের করলাম, বাসায় কল দিতে। কিন্তু ফোনে ব্যালেন্স নেই—সেকালে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার!
কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তবে ছোট মানুষ হলেও মাথা ঠান্ডা রাখলাম। লাইব্রেরির পাশেই তো থাই-অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কশপ। জোরে ডাকলে ওরা শুনবে। তাদের ভারি যন্ত্র দিয়ে জানালা কাটা বা দরজা ভাঙাও কোনো ব্যাপার না। তবে আগে দেখি, আর কোনো উপায় আছে কি না।
দশ মিনিট পর দেখি, কম্পাউন্ডের কোথাও কাজ করা কয়েকজন লোক হেঁটে বেরোচ্ছে। জানালা দিয়ে ডাক দিলাম। তারা তাকাল, এগিয়ে এল। জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই, বাইরে কি তালা লাগানো?”
তারা হেসে মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, “তাহলে তালা ভেঙে ফেলেন।” তারা হাসল, বলল, “তাহলে পুলিশে ধরবে!” কথাবার্তায় উত্তরবঙ্গের ছোঁয়া, বুঝলাম স্থানীয় নন, একটু নার্ভাস।
হঠাৎ দেখি লাইব্রেরিয়ান ভাই হেঁটে আসছেন। জোরে ডাক দিলাম। তিনি দৌড়ে এলেন, জিজ্ঞেস করলেন, “জেমি..তুমি ভেতরে আটকা কেন?” বললাম, “ভাই, আপনিই তো তালা মেরে গেছেন!”
তড়িঘড়ি তালা খুলে তিনি বললেন, “তুমি যখন এসেছিলে, আমি তখন ভেতরে জানালা বন্ধ করে ফাইনাল চেক দিয়ে এসেছি। কেউ ছিল না। তারপর পত্রিকা পড়ছিলাম। ভেবেছিলাম, তুমি সালাম দিয়ে চলে গেছ। তুমি তাহলে ভেতরে ছিলে?”
আমি: “জি, মোঘলদের ইতিহাস পড়ছিলাম।”
লাইব্রেরিয়ান ভাই: “যাক, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন! আমি এখনো কম্পাউন্ড থেকে বেরোইনি, লোকজনকে বেতন দিতে এসেছিলাম। নইলে চাকরিটাই যেত।”
আমি: “হ্যাঁ, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। নইলে আমি ওয়ার্কশপের লোক ডেকে জানালা কাটার প্ল্যান করছিলাম!”
- শাহিনুল জেমি